বিদেশে পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বাজারে যেসব পণ্য প্রবেশ করছে তার সিংহভাগ হলো তৈরী পোষাক। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স,নরওয়ে ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশে তৈরী পোষাক ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন পণ্য রপ্তানি হয় না।
তাই শুধু তৈরী পোষাকের উপর বাজারকে স্থিতিশীল না রেখে নতুন পণ্যের চাহিদায় ডেনমার্কের বাজারে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরী বাইসাইকেল।ডেনমার্কে সাইকেল রফতানিতে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। এর আগে দেশটি থেকে বাংলাদেশের যে রেমিট্যান্স আসত তা সিংহভাগই মূলত তৈরী পোষাক থেকে।
এবার সাইকেলের সে বাজার আরও বিস্তৃত করতে চলতি বছর অক্টোবরেই দেশটিতে সাইকেলের প্রথম চালান যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ডেনমার্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ এ. মুহিত বলেন, ডেনমার্ককে সাইকেলের স্বর্গ বলা হয়। প্রচুর সাইকেলের চাহিদার কারনে দেশটিতে বাইসাইকেল রফতানি করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সুখবর।
তুলনামূলক কম মূল্য হওয়ায় বাংলাদেশের সাইকেলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে ড্যানিশদের কাছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও ডেনমার্ক থেকে গ্রীন টেকনোলজীর অভিজ্ঞতা নিচ্ছে। রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ এ. মুহিত আরও জানান,বর্তমানে ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে ৮০০-৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের রফতানি করে বাংলাদেশ।
২০১৫ সালের মে মাসে ডেনমার্কে বাংলাদেশ নতুন দূতাবাস স্থাপন করার পরই শুরু হয় দু-দেশের মধ্যে বানিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসার। যদিও বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির দূতাবাস রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন পণ্য রপ্তানি না হওয়ায় একচেটিয়াভাবে বানিজ্যের আধিপত্য ছিল স্ক্যান্ডেনেভিয়ানের এই দেশটির।
বতমার্নে দেশটিতে কয়েক হাজার মিলিয়ন ডলারের বানিজ্য সম্ভবনা রয়েছে বাংলাদেশের। যদি কূটনৈতিক ও দু-দেশের আন্ত-সহযোগিতা বাড়ানো যায়। সেক্ষেত্রে রপ্তানির ব্যাপক প্রসার ঘটানো সম্ভব বলে জানান বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। তৈরী পোষাকের পাশাপাশি পাট, সিরামিক ও লেদারের স্বল্প পরিমাণ বাজার রয়েছে দেশটিতে।
এবার নতুন করে যোগ হতে চলেছে বাই সাইকেল, যা অর্থনীতির জন্য বাড়তি পাওনা বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। শুধু তাই নয়, ডেনমার্কের ফার্মাসিটিক্যালসের বাজার ধরার চেষ্টাও করছে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে একটি প্রতিনিধি দলও দেশটি সফর করেছে বলে জানা গেছে। প্রথম চালানে দুটি কন্টেইনারে করে বাংলাদেশের তৈরি বাইসাইকেল ডেনমার্কে যাবে।
মাত্র ৮০০-৯০০ ডলার খরচে এসব সাইকেল কিনতে পারবেন ডেনিশরা। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ডেনিশ কোম্পানি নিউ এশিয়ান নরডিক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে রপ্তানির ক্ষেত্রে অপ্রথাগত (নন ট্রাডিশনাল) বাংলাদেশি পণ্যের একটি জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশি কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ও প্রখ্যাত ডেনিশ ডিজাইনারদের করা নকশার যুগপৎ সংমিশ্রণে তৈরি বাংলাদেশি পণ্য অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহের জন্ম দেয়। অনুষ্ঠানে ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রদূত, ডেনমার্কের বিভিন্ন বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিনিয়োগকারী উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে নিউ এশিয়ান নরডিক গ্রুপ ও অন্যান্য বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের তৈরি বাইসাইকেল ও কার্গো বাইক, অরগানিক চা, পাটের তৈরি কার্পেট ও অন্যান্য পণ্য, পিতলের তৈজসপত্র, হস্তশিল্প ও চামড়াজাত পণ্য ছিল উল্লেখযোগ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডেনমার্কে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৬৬৪ মিলিয়ন ডলার।
মাত্র দেড় বছরের মাথায় সে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯০০ মিলিয়ন ডলারে। স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি আয় যেভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ডেনমার্কের বাজারে, তাতে বাংলাদেশ ও ড্যানিশ ব্যবসায়ীরা দেশটিতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে আগ্রহী হচ্ছে।
এছাড়া দেশটির সাথে যদি বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ী বান্ধব পরিবেশ তৈরী করা যায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশ ঘটানোও সম্ভব বলে মনে করেন দূতাবাস কমকর্তারা। ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে জাহাজ, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাবার, পাটজাত পণ্য, নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টস আমদানি করছে।